জীবনে নারী-পুরুষের নিজস্ব অবস্থান রয়েছে। পুরুষের কর্মস্থল প্রায়ই থাকে গৃহের বাইরে। অপরদিকে অধিকাংশ নারীর কর্মস্থল তাঁর সংসারকে নিয়ে গড়ে ওঠে। জন্মের পরে কন্যা মা-বাবার স্নেহ-যত্নে বেড়ে ওঠে, শিক্ষা গ্রহণ করে। বিবাহিত জীবনে সে স্বামীর ঘরে যায়, স্বামীর সংসার তাকে দেখতে হয়। বৃদ্ধ বয়সে এই মহিলাকেই পুত্রকন্যাদের ওপর নির্ভর করতে হয়। এইভাবে সমাজের একজন নারীর তিনটি অবস্থা দেখা যায়-কন্যা, বধূ ও মাতা। বধূ হিসেবে স্বামীর সংসার দেখা-শোনা, ছেলে-মেয়েদের লালন-পালন, শিক্ষার ব্যবস্থা করা তার কাজ হয়ে পড়ে। এ কাজের মধ্য দিয়ে নারী তার সংসারধর্ম পালন করেন। একজন আদর্শ মায়ের হাতে আদর্শ সন্তান গড়ে উঠতে পারে। সন্তানের কাছে মায়ের মতো আর বন্ধু নেই। রোগে, শোকে, আনন্দে, উৎসবে মা-ই হচ্ছেন সন্তানের শ্রেষ্ঠ আশ্রয়, উৎসাহদাতা ও আনন্দের উৎস। এমন মাতৃরূপী নারীর প্রতি সন্তানের কর্তব্য হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, তাঁর সেবা শুশ্রুষা করা। হিন্দুধর্মের অন্যতম ধর্মশাস্ত্র হচ্ছে মনুসংহিতা। সেখানে সংসারজীবনে কেমন করে শান্তি এসে থাকে তার বর্ণনা দেওয়া আছে। সেখানে বলা হয়েছে, যে সংসারে নারীরা আনন্দে-উৎসবে সুখে জীবন যাপন করে সে সংসার ঈশ্বরের কৃপায় শান্তি সমৃদ্ধিতে ভরে উঠে। তাই নারীদের প্রতি সদয় শ্রদ্ধাপূর্ণ আচরণ ধর্মের অঙ্গ হিসেবে গ্রহণ করা।
অন্যদিকে হিন্দুধর্মে ঈশ্বরের প্রকৃতি বা শক্তি হচ্ছে নারী। এই শক্তিকে বলা হয় আদ্যাশক্তি মহামায়া। শক্তি ছাড়া কোনো কাজ হয় না। আর সেই শক্তির দেবী হচ্ছেন নারী। এভাবে নারী শক্তির প্রতি হিন্দুধর্ম মর্যাদা প্রকাশ করেছে।
ধর্মগ্রন্থে আরও বলা হয়েছে, ঈশ্বর সৃষ্টির জন্য নিজেকে দুভাগ করলেন। এক ভাগ পুরুষ এবং এক ভাগ নারী। এ ভাগ কিন্তু সমান সমান, বেশি বা কম নয়।
'অর্ধনারীশ্বর' নামক একটি প্রতিমায় দেখা যায়, অর্ধেক শিব ও অর্ধেক পার্বতী (দুর্গা)। এর তাৎপর্যও পুরুষ ও নারীর সমতা এবং নারীর প্রতি পূর্ণ মর্যাদাবোধের প্রকাশ।
মহাভারতে বলা হয়েছে, যে পরিবারে নারীর প্রতি যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করা হয়, দেবতারা সে পরিবারে আনন্দে বাস করেন। (অনুশাসন পর্ব, ৪৬/৫)। অন্যদিকে কোনো পরিবারে নারী যদি অশ্রদ্ধা পান, তাহলে সমস্ত শুভকর্ম নিষ্ফল হয়। (অনুশাসন পর্ব, ৪৬/৬)।
নারীর প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের উপায় হলো, তাঁকে পরমা প্রকৃতি দেবী আদ্যাশক্তি মহামায়ার অংশ মনে করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা এবং ধর্মগ্রন্থের অনুশাসন মেনে সমতাপূর্ণ আচরণ করা। সর্বোপরি নারীর মধ্যেও আত্মরূপে ঈশ্বর অবস্থান করেন, তাই নারীর প্রতি মর্যাদা প্রকাশ তো ঈশ্বরের প্রতি মর্যাদা প্রকাশ।
হিন্দুধর্মগ্রন্থসমূহে নারীর প্রতি মর্যাদাবোধের যে সকল দৃষ্টান্ত রয়েছে, আমরা তা অনুসরণ করব। সর্বক্ষেত্রে সম অধিকার নারীর প্রাপ্য- এ সত্য মনে রেখে আমরা নারীর প্রতি মর্যাদা প্রকাশে উদ্বুদ্ধ হব।
কর্মবাদ ও জন্মান্তর, নারীর প্রতি মর্যাদাবোধ, ঈশ্বরজ্ঞানে জীবসেবা, পাপ-পুণ্য, স্বর্গ ও নরকের ধারণা ইত্যাদি আরও অনেক বিশ্বাসের ওপর হিন্দুধর্ম প্রতিষ্ঠিত। আর এ ধর্মবিশ্বাসগুলোর লক্ষ্য হলো মানুষকে প্রকৃত মনুষ্যত্বসম্পন্ন মানুষরূপে গড়ে তোলা এবং পরিবার ও সমাজকে শৃঙ্খলাপূর্ণ ও শান্তিময় করে গড়ে তোলার জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করা।
দলীয় কাজ: নারীকে কীভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় ভূষিত করা যেতে পারে তার কয়েকটি উপায় লেখ। |
নতুন শব্দ: কর্মযোগ, মাহাত্ম্য, অর্ধনারীশ্বর।
Read more